যুদ্দপরাধী অপরাধের অভিযোগে কাশিমপুর কারাগারে আছেন আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির দেলওয়ার হোসাঈন সাঈদী।ঈদুল ফিতরের বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সঙ্গে দেখা করতে আবেদন করবে তার পরিবার।
আবেদনে দেখা করার অনুমতি পেলে পরিবারের সদস্যরা সাঈদীর সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানা গেছে।গত ১২ জুন, মঙ্গলবার সকালের দিকে এ কথা জানান সাঈদীপুত্র মাসুদ বিন সাঈদী।
পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাসুদ বিন সাঈদী। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আব্বার সঙ্গে সাক্ষাত করি নাই। আমরা ঈদের দিনে সাক্ষাত করব। ঈদের আগে এখন আর সাক্ষাত করার সুযোগ নাই। বাবার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত। তার চিকিৎসা হয়নি। হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তাকে আর চিকিৎসা করানো হয়নি। এ কারণে তিনি এখনো অসুস্থই আছেন।’
এখন কোন কারাগারে আছেন সাঈদী, এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বলেন, ‘উনি (সাঈদী) এখন কাশিমপুর কারাগারে আছেন। জেলে যাওয়ার পর আব্বাকে এ পর্যন্ত পাঁচটি কারাগার পরিবর্তন করা হয়েছে।
প্রথমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, সেখান থেকে মুন্সিগঞ্জ কারাগার, তারপর গাজীপুর জেলা কারাগারে নেওয়া হয় আব্বাকে। গাজীপুর থেকে পাঠানো হয় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে। কাশিমপুর থেকে ঢাকা কারাগার, সর্বশেষ উনি (সাঈদী) এখন আছেন কাশিমপুর কারাগারে। গত আট বছরে আব্বাকে পাঁচটি কারাগার পরিবর্তন করা হয়েছে।’
ঈদে সাঈদীর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করবেন কি না প্রশ্নের উত্তরে মাসুদ বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে উনাদের (কয়েদী) কিছু সেমাইসহ হালকা খাবার দেওয়া হয়। আব্বা তো ডায়াবেটিসের প্যাশেন্ট (রোগী)। কারা কর্তৃপক্ষ সেমাইসহ অন্যান্য খাবারগুলো পরিবেশন করেন। কিন্তু ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য আলাদা সুগার ফ্রি মিষ্টিযুক্ত সেমাই পরিবেশন করেন না কারা কর্তৃপক্ষ। ঈদের দিনে নিজেদের বাসা থেকে খাবার তৈরী করে নিয়ে যেতে হয়। সেগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরে অ্যালাও করে কারাগার কর্তৃপক্ষ।’
সাঈদীপুত্র মাসুদ জানান, ঈদ উপলক্ষে বিশেষ কোনো খাবার পছন্দ নেই সাঈদীর। সাধারণত তিনি ছোট মাছ, শাক খেতে পছন্দ করেন। এবার ঈদে পরিবারের সদস্যরা দেখা করার সময় এ খাবারগুলো নিয়ে যাবেন কারাগারে।
সাঈদীর কারাবাস বিষয়ে মাসুদ বিন সাঈদী বলেন, ‘আমি মনে করি সম্পুর্ণ অন্যায়ভাবে, অযৌক্তিভাবে রীতিমত একধরনের অন্যায় করে আট বছর যাবত তাকে জেলে রাখা হয়েছে। আব্বা দুইবার সংসদ সদস্য ছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির। হাসতাল কর্তৃপক্ষ আব্বাকে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেছিলেন কিন্তু সেটি কারাকর্তৃপক্ষ করেনি। তারা বলে উপরের নির্দেশ আছে ভর্তি করানো যাবে না। দেড়মাস চলে গেলেও তারা হাসপাতালে ভর্তি করান নাই। হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। উনার বয়স এখন ৮০ বছর।’
সাঈদীর তিন পুত্র জীবিত আছেন। তারা হলেন- মাসুদ বিন সাঈদী, শামীম সাঈদী, নাসিম সাঈদী। তাদের সবার বড় ভাই রাফিক বিন সাঈদী মারা গেছেন কয়েক বছর আগেই। এর মধ্যে মাসুদ সাঈদী পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর উপজেলা চেয়ারম্যান।
এর আগে গত ১৬ মে দুপুর সাঈদীর সঙ্গে দেখা করেন তার তিন ছেলে। কারাগারে কেমন আছেন আপনার বাবা এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বলেছিলেন, ‘আব্বার বয়স ৮০ বছর। তিনি ৪০ বছর যাবত ডায়াবেটিক রোগে ভুগছেন। তার হার্টে পাঁচটি রিং পরানো আছে। তারপরেও বলব আলহামদুলিল্লাহ।
২০১২ সালে আব্বাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। এরপর তাকে চিকিৎসার জন্য আর কোথাও এডমিট করানো হয়নি। আব্বার চিকিৎসার জন্য আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অনেক জায়গায় আবেদন করেছি। আবেদনে কাজ হয়নি। সর্বশেষ ৩ মে আব্বাকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা হয়েছিল।
আব্বাকে পিজির ডাক্তাররা দেখার পর হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু কারাকর্তৃপক্ষ হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে কারাগারে নিয়ে গেছেন। আব্বা হাঁটুতে, কোমরে ব্যথা পান অনেক আগে থেকেই। আমরা আব্বার চিকিৎসাকে গুরুত্ব দিতে বলবো সংশ্লিষ্টদের কাছে। কারণ দেশের অন্য নাগরিকরা কারাগারে থাকা অবস্থায় চিকিৎসার সুযোগ পেলে আব্বাকে কেন দেওয়া হবে না? আমরা উনার পরিপূর্ণ চিকিৎসা চাই।’
এর আগে ৩ মে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাঈদীকে চিকিৎসার জন্য কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হাসপতালে আনা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, যুদ্দপরাধী অপরাধে মামলায় ২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জামায়াতের তৎকালীন নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ। তবে এর আড়াই বছর আগে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীর ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেএখন তিনি বর্তমানে গজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে আছেন।